শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
অধিনায়ক থেকে একজন ‘মাশরাফি ভাই’ হয়ে ওঠার গল্প

অধিনায়ক থেকে একজন ‘মাশরাফি ভাই’ হয়ে ওঠার গল্প

একদিনের ক্রিকেটে মাশরাফি মোর্ত্তজা বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৮৮ ম্যাচে। জয়-পরাজয়ের গল্প ছাপিয়ে কখনো কখনো সামনে এসেছে তার নেতৃত্বগুণের কথা, সতীর্থদের আগলে রাখার গল্প। দলের নেতা না হয়ে সবার কাছে ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছেন মাশরাফি ভাই, সাকিব-তামিমদের মাশরাফি ভাই। এসব গল্প গণমাধ্যমের কল্যাণে প্রায়ই উঠে এসেছে। কিন্তু এবার মাশরাফিকে সামনে রেখেই কথাগুলো বললেন বর্তমান বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

গতকাল রাতে সামাজিক যোগোযোগের মাধ্যম ফেসবুকে এক লাইভ আড্ডায় মেতে ওঠেন মাশরাফি আর তামিম। এখানে উঠে আসে নানা অজানা গল্প। তামিম ভক্তদের সামনে তুলে ধরেন মাশরাফির আগলে রাখার গল্প। ২০১৫ সালে যখন তামিমের ক্যারিয়ারে দুঃসময় যাচ্ছিল তখন পাশে পেয়েছিলেন তাকে। এমন একটা দিন এসেছিল মাশরাফিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন। সেদিনটি তামিমের কাছে জীবনের একটি স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। কখনো ভুলতে পারবেন না বলেও লাইভে জানান তামিম।

তামিম বলেন, ‘আপনি কোনো না কোনোভাবে সবাইকে সেভ করছেন। সেটা আমি (তামিম) হই, সাকিব, মুশফিক বা রিয়াদ ভাই যেই হোক না কেন। এটা আমি জানি, কোনো বিপদ আসছে আমাদের ওপর আপনি সামলে নিয়েছেন।’

ব্যাট হাতে পজিশন পরিবর্তনের পর সাকিব আল হাসান ডানা মেলে উড়া শুরু করেছিলেন। তাকে ঠেকানোর সাধ্য কার। বিশ্বের বাঘা-বাঘা বোলারদের তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন তিন নম্বরে (ওয়ান ডাউনে) নামার পর থেকেই। এতে কৃতিত্ব অবশ্যই সাকিবের; কিন্তু পর্দার আড়ালের নায়ক অবশ্যই অন্যজন; তিনি মাশরাফি।

সাকিবের ক্যারিয়ার সেরা গড় এই পজিশনে খেলেই। সাকিব তার ২০৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মাত্র ২৩ ম্যাচ ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন তিনে। এই কয়টি ম্যাচে ৫৮.৮৫ গড়ে করেন ১১৭৭ রান। সেঞ্চুরি দুটি ও হাফসেঞ্চুরি ১১টি। পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় তিনের সাকিব সেরা সাকিব। বিশ্বকাপে এ পজিশনেই খেলতে নেমে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। অথচ সাকিব তিনে নামুক চাননি সতীর্থ তামিম ইকবাল; অবশ্য দলের ভালোর জন্য। তার যুক্তি ছিল সাকিব যদি শুরুতেই আউট হয়ে যায় তাহলে শেষ দিকে খেলবে কে?

সোমবার রাতে মাশরাফির সঙ্গে ফেসবুক লাইভ আড্ডায় সাকিবকে নিয়ে তামিম বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি চাইনি সাকিব তিনে খেলুক। কেননা শুরুতে যদি আমি আর সাকিব আউট হয়ে যাই তাহলে ঘুরে দাঁড়ানোর মতো ব্যাটসম্যান আমাদের আর থাকবে না। এ কারণে আমি চেয়েছি সাকিব নিচে খেলুক। যদিও সে অনেক আত্মবিশ্বাসী ছিল।’

তামিম না চাইলেও সাকিবের আত্মবিশ্বাসে আস্থা রেখেছিলেন মাশরাফি মোর্ত্তজা। মাশরাফি বলেন, ‘সাকিবকে তিনে নামাতে আমি রাজি হয়েছিলাম মূলত। কোচও রাজি ছিল না। তুইও (তামিম) না। কিন্তু আমি চিন্তা করে দেখলাম বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে যদি ১-২ ম্যাচে সাকিব রান না পায় তাহলে সবার আগে তারই সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগবে।’ অধিনায়কের আস্থা, নিজের দৃঢ় আত্মবিশ্বাস সাকিবের জন্য যেন কাজ করছিল ম্যাজিকের মতো। ব্যাট করতে নামলেই রান পাচ্ছিলেন।

শুধু কী তামিম-সাকিব? না, দলের সবার প্রতিই মাশরাফির টান। লো-স্কোরিংয়ের কারণে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে অনেক সময় সমালোচনা সইতে হতো। কিন্তু মাশরাফি আস্থা হারাননি। তিনি জানেন, ইনিংসের শেষ সময়ে কঠিন মুহূর্তে মাহমুদউল্লাহর রান কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তামিমের কথাই সেটা উঠে আসে। ‘আপনি ভাইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে আপনি আলাদা একটা আস্থা রাখতেন। এটা আমি সবসময় দেখেছি। রিয়াদ ভাইয়ের সাথে আমি লাইভ করছি তাকে আমি বললাম আমরা যে ৭০-৮০ করি লোকে সেটা প্রশংসা করে, কিন্তু রিয়াদ ভাই যে ২৫-৩০ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে সেগুলোর জন্য অতটা প্রশংসা পায়না। তবে আমরা জানি, আপনি জানেন কতটা গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসগুলো’- বলছিলেন তামিম।

মাশরাফি দলের সবার কাছে সুসময়ের বন্ধু না হয়ে সবার বিপদের মুহূর্তে পাশে দাঁড়িয়েছেন, আগলে রেখেছেন। তাইতো নেতা না হয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন মাশরাফি ভাই।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877